Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

খাদ্য নিরাপত্তায় চার ফসলি শস্যবিন্যাস

কৃষিবিদ মোঃ আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি

জনসংখ্যার ঘনত্বে দিক থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে প্রায় ১৯ কোটি জনসংখ্যার জন্য ৪ কোটি টন খাদ্য প্রয়োজন হবে। তাই বর্তমান দানা ফসলের হেক্টরপ্রতি গড় উৎপাদন ২.৮ টন হতে ৪ টনে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ লোক শরীরে চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য শক্তি পায়। ভয়ংকর হলেও সত্য এদেশে শতকরা মাত্র এক ভাগ লোক ভিটামিন-বি এবং ২৩ ভাগ লোক ভিটামিন-সি এর চাহিদা পূরণ হয়। আমাদের দেশে দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে সকলের নিজ নিজ জায়গা হতে কাজ করতে হবে।  এজন্য আমিষের অন্যতম উৎস ডাল আবাদ বৃদ্ধির দিকে সকলের নজর দিতে হবে।


মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন ধান এই শস্যবিন্যাসটি চালের আবাদ ঠিক রেখে পুষ্টিকর ডাল আবাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব। খাদ্য নিরাপত্তা সহজভাবে বললে, কোন দেশের সকল জনসংখ্যার সহজভাবে খাদ্যশস্য ও পুষ্টি লভ্যতাকে বুঝানো হয়। তবে অনেকেই মনে করেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বাজার বিশৃংখলার কারণে হঠাৎ আসা আপদের সময় উদ্ভ‚ত খাদ্যসংকটের মোকাবেলায় খাদ্যশস্য মজুদ থাকাকে খাদ্য নিরাপত্তা বলে। এফএও (FAO) (১৯৯৬) এর মতে ‘খাদ্য নিরাপত্তা হচ্ছে যা মানুষের জন্য সব সময়ের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্যের লভ্যতা, যার ফলে তারা তাদের পথ্যের অভাব এবং খাদ্যের অভিরুচী ও  অগ্রাধিকার মিটিয়ে একটি কর্মঠ ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে পারে।’


বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী বিভাগের প্রায় এক চতুর্থাংশ (১৬০০ বর্গকিলোমিটার) জুড়ে উঁচু-নিচু অর্থাৎ অসমতল যে ভুমি তাকেই বরেন্দ্র অঞ্চল বলে। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে যায়। তাই এ অঞ্চল একটি খরাপ্রবণ এলাকা হিসাবে পরিচিত। বরেন্দ্র আঞ্চলে চাষাবাদে সমস্যা হলো শুষ্ক মৌসুমের শুরুর দিকেই মাটিতে রসের স্বল্পতা, কিছু কিছু জায়গায় অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমেই মাটির রস শুকিয়ে যাওয়া, জৈব পদার্থ মাটিতে কম থাকা, শুষ্ক মৌসুমে মাটি শক্ত হয়ে যাওয়া, বর্ষাকালে অবিরাম মাটি ভিজে থাকা, খরিফ খন্দে বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা এবং স্বল্পতা।


এই রকম প্রতিকুল আবহাওয়া এলাকায় ফসল উৎপাদন কিছুটা কষ্টকর। বৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বন করে চার ফসলি ধরনের শস্যবিন্যাস এই এলাকায় যেখানে বোরো-পতিত-রোপা আমন শস্যবিন্যাস আছে সেখানে কার্যকর হতে পারে। বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য আরো পানি কম ব্যবহার হয় এমন শস্যবিন্যাস কৃষি বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে উদ্ভাবন করে যাচ্ছেন। তবে নিম্নলিখিত চার ফসলি শস্যবিন্যাস বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য উপযোগী  হবে।
মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন/তিল- মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন/আলু- মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন/সরিষা-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন/গম- ধৈঞ্চা-রোপা আউশ-রোপা আমন। নিম্নে মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন শস্যবিন্যাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) কর্র্তৃক উদ্ভাবিত বারি মসুর-৩, বারি মসুর-৬ ও বারি মসুর-৭ খনিজ সমৃদ্ধ জাত যার জীবনকাল  ১১০-১২০ দিন। বারি মসুর-৩ জাতটির এখনও মাঠপর্যায়ে ভালো ফলন পাওয়া যায় এবং কৃষকের কাছে পছন্দনীয়। তবে এই বিন্যাসে বারি মসুর-৬ বেশি কার্যকরি।


বারি মুগ-৬ স্বল্পমেয়াদিজাত । এর জীবনকাল ৬০-৬৫ দিন। এই জাতটি এই বিন্যাসের সাথে বেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুগ ডালের পড বা ফল তুলে গাছগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দিলে জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং আমন ধানে কম ইউরিয়া সারের প্রয়োজন হয়। তবে মুগডালের গাছ মাটির সাথে মিশানোর ৪-৫ দিন পর আমন ধানের চারা লাগালে বেশি লাভ হয়। আর মুগডাল চাষে পানির তেমন প্রয়োজন হয় না এবং উৎপাদন খরচ কম হয়।


বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত রোপা আউশের একটি উচ্চফলনশীল জাত ব্রি ধান-৪৮ যা চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে কর্তন করা সম্ভব। আউশের জন্য ব্রি ধান৪৮ (জীবনকাল-১১০ দিন এবং ফলন-৫.৫ টন/ হেক্টর), ব্রি ধান৫৫ (জীবনকাল-১০৫ দিন এবং ফলন-৫.০ টন/ হেক্টর) করলে সঠিক সময়ে আমন চাষ করা যাবে। তবে এই বিন্যাসে ব্রি ধান৪৮ বেশি উপযোগী। তবে এ ক্ষেত্রে আউশের চারা  ২০-২৫ দিন বয়সের হতে হবে। এই শস্য বিন্যাসে রোপা আউশ ধান হিসেবে ব্রি ধান৪৮ জাতটি বেশি কার্যকরি।


বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) কর্তৃক স্বল্পমেয়াদি আগাম কর্তনযোগ্য আমন ধানের জাত ব্রি ধান৫৭, ব্রি ধান৬২ ও বিনা ধান৭ উদ্ভাবিত হয়েছে যার জীবনকাল মাত্র ১১০-১২০ দিন। এ সব জাতের চারা রোপণের পর ফসল কর্তন করতে ৮০-৮৫ দিন সময় লাগে। এক্ষেত্রে আমনের জন্য বিনা-৭ (জীবনকাল- ১১০-১১৫ দিন এবং ফলন-৫.০ টন/ হেক্টর) বা ব্রি ধান৫৬ (জীবনকাল-১১০ দিন এবং ফলন-৫.০ টন/ হেক্টর), ব্রি ধান৫৭ (জীবনকাল-১০৫ দিন এবং ফলন-৪.৫ টন/ হেক্টর) চাষ করা যেতে পারে। তবে আমনের চারা ২৫-৩০ দিন বয়সের হতে হবে। এই শস্যবিন্যাসে রোপা আমন ধান হিসেবে ব্রি ধান ৫৭ জাতটি বেশি কার্যকরি।


বাংলাদেশ কৃষি গাবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ, বরেন্দ্র কেন্দ্র, রাজশাহী মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন এই চার ফসলের শস্যবিন্যাসটির পরীক্ষা সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। এই ফসল ধারা প্রবর্তন করে পতিত জমি চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং ভুগর্ভস্থ পানির উত্তোলন কমানো সম্ভব।


সুতরাং বাংলাদেশে যে সব এলাকায় রোপা আমন পতিত বোরো ফসল ধারা রয়েছে সেই সব এলাকায় মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন ধান ফসলধারা প্রচলন করা সম্ভব অর্থাৎ চার ফসলভিত্তিক ফসলধারাসমূহ কৃষিতাত্তি¡কভাবে চাষ করা সম্ভব, এতে করে শস্য নিবিড়তা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে আমাদের দেশে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে। ফসলধারাটি আগামীতে ক্রমহ্রাসমান আবাদি জমি থেকে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য খাদ্য উৎপাদনের একটি অন্যতম প্রযুক্তি হিসেবে কাজ করবে।


আমরা জানি এক বছর=৩৬৫ দিন।
এই ফসলধারায় বারি মসুর-৬ উৎপাদনের মোট সময় ১১৫ দিন বারি মুগ-৬ উৎপাদনের এর মোট সময় ৬৭ দিন।
রোপা আউশ ধান হিসেবে ব্রি ধান৪৮ উৎপাদনের এর মোট সময় ৮৫ দিন, রোপা আমন ধান হিসেবে ব্রি ধান৫৭ উৎপাদনের এর মোট সময় ৭৭ দিন। সে হিসেবে এই বিন্যাসটি করলে ১ বছরে মোট প্রয়োজনীয় সময় ৩৪৪ দিন। অবশিষ্ট সময় (৩৬৫-৩৪৪) =২১ দিন বছরে বাকি থাকছে।


এক নজরে মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন ধান ফসল ধারায় অন্তর্ভুক্ত ফসলের নাম ও চাষের সময় সারণি দ্রষ্টব্য।

                                                মসুর-মুগ-রোপা আউশ-রোপা আমন ধান

ফসলের নাম মসুর মুগডাল রোপা আউশ ধান রোপা আমন ধান
উপযোগী জাত
বারি মসুর-৬

 

বারি মুগ -৬

 
ব্রি ধান৪৮ ব্রি ধান৫৭
আগস্ট
ফসল চাষের সময় নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহে বপন এবং মার্চ মাসের প্রথম সপ্তহে ফসল কর্তন মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে বপন এবং মে মাসের ২য় সপ্তাহে কর্তন

মে মাসের ২য়, ৩য়, সপ্তাহে চারা রোপণ এবং আগস্ট মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে কর্তন

 


 

মাসের তৃতীয় সপ্তাহে রোপণ এবং নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কর্তন
 
প্রয়োজনীয় সময় ১১৫ দিন ৬৭ দিন। ৮৫ দিন। ৭৭ দিন।


জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে প্রতি বছর জমির পরিমাণ কমছে ০.৪৪% হারে। এই ফসল ধারায় শস্যনিবিড়তা বিদ্যমান ১৯৪% হতে ৪০০% করা যাবে। সময় এসেছে সুচিন্তিতভাবে দেশের বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলকে বিভিন্ন ফসলের আওতায় ভাগ করে চাষাবাদ করলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।  তবে ধান যেহেতু বাংলাদেশের প্রধান ফসল একে বাদ দিয়ে শুধু অন্য ফসলের উন্নয়ন কখনই কাক্সিক্ষত হবে না। যেহেতু এই শস্যবিন্যাসটিতে দুইটি ধান থাকায় খাদ্য নিরাপত্তার ওপরও কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের কৃষি আজ হুমকির মুখে পড়েছে। এই ধরনের আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হলে বরেন্দ্র অঞ্চলে আসবে এক সুন্দর সকালের সূর্যাদয়। আর তখনই আমরা গানের কয়েকটি লাইন বলতে পারব- ‘ধন ধান্য পুষ্প ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা, তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা, ওসে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সেদেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানি সেযে আমার জন্মভূমি।’

আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, রাজশাহী, ফোন : ০৭২১-৭৭৩২৭৭, ই-মেইল : rajshahi@ais.gov.bd

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon